৫১ সতীপীঠের মধ্যে অন্যতম হল আসামের কামাখ্যা মন্দির। গোটা বছরই এই মন্দিরের ভক্তদের ঢল থাকে। তবে প্রত্যেক বছর জুন মাসের দিকে কয়েকদিনের জন্য মন্দির বন্ধ থাকে। ওই সময়টা আসলে অম্বুবাচীর সময়। কথিত আছে, এই সময় নাকি দেবী ঋতুমতী হন। হিন্দু ধর্মের কোনও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান এই সময় কালে হয় না। আসামের কামাখ্যা মন্দিরে ভক্তদের আগমন হলেও এই সময় মায়ের দর্শন পাওয়া যায় না।
অম্বুবাচীর মাহাত্ম্য
অম্বুবাচী, সংস্কৃত শব্দ অম্ব অর্থাৎ জল এবং বাচী অর্থাৎ বৃদ্ধি থেকে এই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে আষাঢ় মাসের ৭ তারিখে পৃথিবী ঋতুমতি হয়। বাস্তবে দেখতে গেলে এই সময় প্রবল গ্রীষ্ম বিদায় নিয়ে বর্ষার আগমন ঘটে। যার ফলে পৃথিবী প্রজননশীল হয়। শস্য জন্মানোর পক্ষে উপযুক্ত এই সময়। তিন দিনব্যাপী এই অম্বুবাচীর সময়ে বেশ কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
অম্বুবাচী কবে পালন হয়?
শাস্ত্র অনুসারে, আষাঢ় মাসে মিথুন রাশিতে আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদে গমন করেন সূর্যদেব। সেই সময়কে অম্বুবাচী বলে। এই বছর ২২ শে জুন থেকে ২৬ শে জুন পর্যন্ত অম্বুবাচী চলবে। আসামের কামাখ্যা দেবীর মন্দিরের গর্ভগৃহের দরজা এই সময় বন্ধ থাকবে। তবে শুধু আসামের কামাখ্যা মন্দির নয়, প্রত্যেক দেবী মন্দিরে মায়ের বিগ্রহ এই সময় কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। অনেক জায়গাতে দেবীর নিত্য সেবাও বন্ধ থাকে।
কামাখ্যা মন্দিরের মাহাত্ম্য
আসামের গুয়াহাটি শহরে নীলাচল পর্বতে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দিরের এই জায়গায় দেবী সতীর যোনি পড়েছিল বলে লোকের বিশ্বাস। এখানে দেবীর কোনও মূর্তি নেই। রয়েছে কেবল একটি কুণ্ড। এই কুণ্ড সব সময় ফুল দিয়ে আবৃত থাকে। অম্বুবাচীর সময়ে কুন্ডের উপর একটি সাদা রঙের কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। অম্বুবাচী শেষ হলে নাকি দেখা যায় কাপড়টি লাল হয়ে গিয়েছে।
অম্বুবাচীর এই ৩ দিন দেবী যোগ নিদ্রায় মগ্ন থাকেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এই সময় তার একান্তে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এই কারণেই আসামের কামাখ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভক্তরা মাকে দেখতে পান না। ৩ দিন পর অম্বুবাচী শেষ হলে কামাখ্যা দেবীকে স্নান করিয়ে শুদ্ধ করে তোলা হয়। এরপর আবার ভক্তরা আগের মত দেবী দর্শন করতে পারেন।
আরও পড়ুন : থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রি! বিনামূল্যে ঘোরার জন্য ভারতের সেরা ১০টি টুরিস্ট স্পট
আরও পড়ুন : Kalighat Temple : কত কেজি সোনা রয়েছে কালীঘাট মন্দিরের চূড়ায়?
অম্বুবাচীর এই তিন দিন মন্দির বন্ধ থাকলেও মন্দিরের আশেপাশে মেলা বসে। অনেক মানুষের আগমন হয় এই সময়ে। শুধু আসাম নয়, উড়িষ্যাতে এই সময় রজ উৎসব পালন হয়। বাংলাতেও এই সময় ঘরে ঘরে অম্বুবাচী পালন হয়। চাষবাস বন্ধ থাকে, গৃহপ্রবেশ-বিবাহের মত শুভ কাজ বন্ধ থাকে। মন্দিরের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিধবা মহিলারা তিন দিনের ব্রত রাখেন। এই তিন দিনে তারা কোনও গরম খাবার খান না। অম্বুবাচী শুরু হওয়ার আগের বাসী রান্নাই ৩ দিন ধরে তাদের খেতে হয়।