সম্প্রতি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। যেভাবে অটোমেটেড সিগনাল ব্যবস্থা খারাপ থাকার কারণে একই লাইনে দুটো গাড়ি চলে এসে এই বিপর্যয় ঘটেছে তাতে অনেকেই রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন ট্রেনে কি তাহলে কবচ ছিল না? কারণ কবচ থাকলে এই ঘটনা ঘটত না। এখন প্রশ্ন হল কী এই কবচ? কীভাবে এটি ট্রেনকে রক্ষা করে?
রেলের কবচ আসলে কী?
রেলের কবচ আসলে একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। যখন একই লাইনে দুটি ট্রেন চলে আসে তখন এই কবচের মাধ্যমে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। কবচ হল অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশন বা এটিপি সিস্টেম। রিসার্চ ডিজাইন এন্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশন তিনটি ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে মিলে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তৈরি করেছে।
রেলে কবচ থাকলে দৃশ্যমানতা কম থাকলেও ট্রেন চলাচল করতে পারে। মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটার সম্ভাবনা থাকলে কবচ চালককে আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়। এরমধ্যে রয়েছে মাইক্রো প্রসেসর, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম এবং রেডিও সংযোগ। এতে রেললাইন, স্টেশন এবং সিগন্যালের কাছে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন বসানো থাকে। আসলে এই প্রযুক্তি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে একই লাইনের উপর দুটি ট্রেনের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়।
যদি চালক সঠিক সময়ে ব্রেক কষতে না পারেন তাহলে এই স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি নিজে থেকেই ব্রেক কষে ট্রেন থামিয়ে দেয়। ট্রেনের অবস্থান এবং গতি চিহ্নিত করে সতর্ক করে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবস্থা নিতে পারে এই স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি। একই লাইনে ৫ কিলোমিটারের দূরত্বে আরেকটি ট্রেন চলে এলে এই প্রযুক্তি নিজে থেকেই ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেয়। ওই দ্বিতীয় ট্রেন চলে যাওয়ার পর আবার প্রথম ট্রেন চলতে শুরু করে।
ঝড় হোক বৃষ্টি কিংবা কুয়াশা, সব অবস্থাতেই কাজ করতে পারে এই সিস্টেম। ভারতীয় রেলের নেটওয়ার্ক বিশ্বের বৃহত্তম নেটওয়ার্ক। প্রায় ১ লক্ষ কিলোমিটারের বেশি রেলের নেটওয়ার্ক রয়েছে ভারতে। এর মধ্যে কেবল ১৫০০ কিলোমিটার লাইনের উপর কবচের ব্যবস্থা রয়েছে। দ্রুত ভারতের সব লাইনে কবচ বসানো হোক এই দাবিই জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন : কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা! বদলে গেল একাধিক ট্রেনের রুট, দেখে নিন তালিকা
আরও পড়ুন : ট্রেন লেট হলেই ফেরত পাবেন টাকা! জানুন ভারতীয় রেলের নতুন নিয়ম
রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান জয়া বর্মা সিংহ দুর্ঘটনার পর একটি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জানিয়েছেন দিল্লি-গোয়াহাটি রুটের সুরক্ষা ব্যবস্থা বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যেই ৬০০০ কিলোমিটার লাইনে কবচ বসবে। এই বছরের মধ্যেই ৩০০০ কিলোমিটার লাইনকে কবচ দেওয়া হবে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গও থাকবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে ১৬ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা খরচ হবে।