হঠাৎ করে ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়লে যাত্রীদের পক্ষে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। পরিবার-পরিজন কিংবা সহযাত্রীদের কথা দূরে থাক, বিপদের মুহূর্তে নিজেকে কীভাবে বাঁচাবেন সেটাও মাথায় আসে না অনেকের। প্রচন্ড মানসিক উত্তেজনা এবং আতঙ্কে থাকেন সকলে। যার ফলে আতঙ্কে অনেক সময় ভুল করে ফেলে আরও বড় বিপদে পড়ে যেতে পারেন। হঠাৎ রেল দুর্ঘটনা ঘটলে নিজেকে কীভাবে বাঁচাবেন? জানুন বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন।
ট্রেন থেকে নামবেন না
ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ট্রেন ছেড়ে নেমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বেশিরভাগ যাত্রী। কিন্তু রেলের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন আর যাই হয়ে যাক ট্রেন থেকে কখনও মাঝপথে নেমে যাওয়া উচিত নয়। কারণ ট্রেন কখন কোথায় কীভাবে আছে, চারপাশে জঙ্গল রয়েছে কিনা বা জনপদ কতদূর সেসব না জেনে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা নির্বুদ্ধিতার পরিচয়।
হেল্পলাইন নম্বরের জন্য অপেক্ষা করুন
যে স্থানে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটলো যদি সেখানে ফোনের নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায় বা ফোন নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে তাহলেও উদ্বেগের কারণ নেই। কারণ রেল খুব দ্রুত হেল্পলাইন নম্বর চালু করবে। রেলের আধিকারিকেরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবেন। তাদের জন্য অপেক্ষা করুন।
শিশু এবং বয়স্কদের সামলাবেন কীভাবে?
ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে যদি আপনি রক্ষা পেয়ে গিয়ে থাকেন এবং সুস্থ থাকেন তাহলে আপনার পরবর্তী কর্তব্য হবে সহযাত্রীদের সামলানো। বিশেষ করে ট্রেনে যে শিশু এবং বয়স্করা থাকবে তাদের দেখুন। শিশুরা কান্নাকাটি করলে তারা যে সুরক্ষিত আছে সেটা বোঝানোর চেষ্টা করুন। বয়স্কদের হার্ট দুর্বল হয়। মানসিক উত্তেজনা তাদের শরীরের জন্য খারাপ হতে পারে। তাই তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করুন।
সঙ্গে রাখুন মেডিকেল কিট
দুর্ঘটনা কখনও বলে আসে না। ট্রেন হোক কিংবা আর কোথাও, নিজের সঙ্গে সবসময়ই ফার্স্ট এইড কিট এখন। সঙ্গে কিছু ব্যান্ডেড, এন্টিসেপটিক প্যাড, তুলো, লিউকোপ্লাস্ট, কাটা-ছেঁড়ার ওষুধ, আর্নিকা, বমি ও জ্বরের ওষুধ সঙ্গে রাখুন। এর মধ্যে যেন একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজারও থাকে।
আর কী কী রাখবেন?
সবসময় নিজের সঙ্গে শুকনো কিছু খাবার রাখবেন। বিস্কুট, মিষ্টি, কেক, ফল সঙ্গে রাখার চেষ্টা করবেন। সঙ্গে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল থাকে।
ফোনে সমস্যা হলে কী করবেন?
দুর্ঘটনার স্থলে নেটওয়ার্কের অভাবের কারণে যদি যোগাযোগ ব্যাহত হয় সেক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপের মারফত পরিবারের সদস্যদের মেসেজ পাঠিয়ে রাখতে পারেন। ফোন যদি হঠাৎ হ্যাং হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ফোন রিস্টার্ট করুন। রিস্টার্ট করতে অসুবিধা হলে ফোনের ভলিউম বাড়ানো এবং কমানোর বোতাম ও পাওয়ার বোতাম একসঙ্গে ১০ সেকেন্ড চেপে রাখুন। ফোন নিজে থেকেই রিস্টার্ট হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন : ট্রেন দুর্ঘটনায় মিলবে ১০ লক্ষ টাকার বীমা, টিকিট বুকিংয়ের সময় করুন শুধু এই একটি কাজ
আরও পড়ুন : বয়স্ক বাবা-মাকে নিয়ে ঘুরে আসুন এই ৫টি জায়গা, ফিরে আসতে মন চাইবে না
কীভাবে মনের যত্ন নেবেন?
দুর্ঘটনা থেকে সাময়িকভাবে রক্ষা পেলেও কিন্তু এর আতঙ্ক দীর্ঘদিন পর্যন্ত মনের মধ্যে গেঁথে থাকতে পারে। যাকে বলে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার। অনেক সময় সেই ব্যক্তি রাতে ঘুমোতে পারেন না। ঘুম হলেও দুঃস্বপ্ন দেখেন। তাই এরকম দুর্ঘটনায় পরিস্থিতি থেকে ফিরলে অবশ্যই একবার কাউন্সিলিং করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। কিছু ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতিতে মানসিক চাপ থেকে দ্রুত রেহাই পাবেন।