পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরে লুকিয়ে আছে এক অলৌকিক রহস্য! জানলে চমকে যাবেন

Published on:

Puri Jagannath Temple Kitchen Unknown Facts

৭ই জুলাই থেকে শুরু হয়েছে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা গিয়েছেন মাসির বাড়ি। উড়িষ্যার পুরীতে মহা ধুমধাম করে প্রত্যেক বছরই পালন হয় রথযাত্রা। শুধু রথযাত্রা উপলক্ষে নয়, পুরীতে সারা বছরই দর্শনার্থী এবং ভক্তদের ভিড় থাকে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ পাওয়ার জন্য মুখিয়েই থাকেন ভক্তরা। এই মহাপ্রসাদ ঘিরে রয়েছে অন্য রহস্য।

জগন্নাথ দেবের মন্দিরের রান্নাঘরকে বলে রোসাঘর। পুরীর মন্দিরে প্রত্যেকদিন জগন্নাথ দেবকে ৫৬ পদ সহযোগে ভোগ অর্পণ করা হয়। এই ভোগ রান্না করা হয় মন্দিরের বিরাট একটি রান্নাঘরে। এখানে ৩২ টি ঘর রয়েছে। জগন্নাথ দেবের ভোগ রান্নাও কার্যত দারুণ এলাহী এক ব্যাপার। এই রান্নাঘরকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রান্নাঘর বলা হয়। এখানে যা কিছু রান্না হয় তা কখনও বাড়তি হয় না কিংবা কম পড়ে না।

PURI JAGANNATH TEMPLE

জগন্নাথ দেবের ভোগের জন্য যে রান্না হয় তাতে কোনও ধাতব বাসন ব্যবহার হয় না। এত রান্না করতে কোনও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের সাহায্য নেওয়া হয় না। মাটির পাত্রে সব রান্না হয়। তাও আবার কোনও পুরনো মাটির পাত্র ব্যবহার হয় না। প্রত্যেকদিনের রান্নার জন্য নতুন নতুন পাত্র আনতে হয়। এখানে ৭৫২ টি উনুন রয়েছে। ৬০০ জন রাঁধুনী রান্না করেন। তাদের সাহায্য করেন আরও ৪০০ জন সেবক।

রোসাঘরে যে উনুনগুলো রয়েছে তার মধ্যে একটি করে বড় মুখ থাকে এবং তার চারপাশে আরও কয়েকটি ছোট ছোট মুখ থাকে। উনুনে সব থেকে বড় মাটির হাড়িতে অন্ন বসানো হয়। তার উপরে ৭ থেকে ৯ পর্যন্ত আরও কয়েকটি হাঁড়ি বসিয়ে রান্না হয়। উপরের এই হাঁড়িগুলোতে তরকারি, পায়েস ইত্যাদি রান্না হয়। অন্ন বসানো পাত্রের ভাপ থেকে উপরের হাঁড়িগুলোর রান্নাও তৈরি হয়ে যায়।

PURI JAGANNATH TEMPLE

সব থেকে অদ্ভুত হল এইভাবে রান্না হলে উপরের পাত্রের রান্নাগুলো আগে হয়ে যায়। সব থেকে নিচে থাকা পাত্রটির রান্না সবার শেষে শেষ হয়। নিচ থেকে উপর পর্যন্ত সব কটি রান্না কিন্তু সুসিদ্ধ হয় এতে। মাটির হাড়ির মধ্যে ফুটন্ত জলে সবজি ও মসলা দিয়ে রান্না হয়। সব বাটা মশলা দেওয়া হয়। মশলার মধ্যে থাকে এলাচ বড় এলাচ দারচিনি গোলমরিচ, আদা, কালো সরষে, জোয়ান, লবঙ্গ, জায়ফল, হলুদ এবং নুন। চিনির বদলে ব্যবহার করা হয় গুড়‌। রান্নার সময় কোনওভাবে নাড়াচাড়া করা হয় না।

PURI JAGANNATH TEMPLE

জগন্নাথ দেবের ভোগ রান্নায় কোনও বিদেশী সবজি ব্যবহার হয় না। পেঁপে, আলু, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা মন্দিরে ঢোকে না। দেশীয় সবজির মধ্যে রান্না হয় যেমন রাঙা আলু, পটল, ঝিঙে, কাঁচকলা, কাঁকরোল ইত্যাদি। জগন্নাথ দেবকে পাক্কা এবং সুক্কা খাবার দেওয়া হয়। পাক্কা খাবারের মধ্যে থাকে সেদ্ধ খাবার, যেমন ডাল, চাল, খিচুড়ি, সবজি, পায়েস ইত্যাদি। সুক্কা খাবারের মধ্যে থাকে গজা, মিষ্টি বিভিন্ন ধরনের পিঠে। রান্নার কাজে যে জল ব্যবহার করা হয় তা আসে মন্দিরের মধ্যে থাকা গঙ্গা এবং যমুনা নামে দুটো কুয়ো থেকে।

আরও পড়ুন : পুরীতে গিয়ে ভুলেও করবেন না এই ১০ কাজ, নাহলে চরম বিপদে পড়বেন

PURI JAGANNATH TEMPLE

আরও পড়ুন : পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অজানা ১০ রহস্য যার সমাধান আজও হয়নি

রান্নার পর খাবারগুলোকে ভোগ মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে আনন্দবাজারে আনা হয়। আনন্দবাজারে দিনে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রসাদ বিক্রি হয়। জগন্নাথ দেবের মন্দিরের রাঁধুনীরা বংশানুক্রমে রান্না করে আসছেন। তবে রান্নার আগে তাদের খাবার খেয়ে নিতে হয়। তারপর পান খেয়ে স্নান করে ভিজে গামছা পরে হেঁসেল পুজো করে রান্না শুরু করতে হয়।। রান্নাঘরে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।