উত্তরে কাশ্মীর আর দক্ষিণে কন্যাকুমারী। একদিকে যদি থাকে বরফাবৃত পর্বত তো অন্যদিকে রয়েছে সমুদ্র। অবশ্য উত্তর ছাড়া পূর্ব, পশ্চিম এবং দক্ষিণে ভারতের তিন দিকই সমুদ্র ঘেরা। তবে কন্যাকুমারী আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের ত্রিবেণী সঙ্গমের জায়গা। এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ শোভা দেখা যায় সকাল-সন্ধ্যা। কন্যাকুমারীতে দেখার মত অনেক জায়গা রয়েছে। কীভাবে যাবেন সেখানে? কী কী দেখবেন? খরচ কত পড়তে পারে? জেনে নিন এই প্রতিবেদন থেকে।
কন্যাকুমারীতে কী কী দেখবেন?
বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল
কন্যাকুমারীর একটি ছোট দ্বীপে স্বামী বিবেকানন্দ তিন দিনের জন্য ধ্যান করেছিলেন। সেই জায়গা বর্তমানে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল নামে পরিচিত। এখানে বিবেকানন্দ মণ্ডপম এবং শ্রীপদ মণ্ডপম শিলা রয়েছে তার স্মৃতিসৌধ হিসেবে। এর ঠিক পেছনেই ভারত মহাসাগরের মধ্যে স্বামীজীর বিশাল এক মূর্তি রয়েছে।
তিরু ভাল্লুভামূর্তি
কন্যাকুমারীর আরেকটি ছোট দ্বীপে প্রখ্যাত দার্শনিক এবং কবি তিরু ভাল্লুভার মূর্তি রয়েছে। ৩৮ ফুট উঁচু একটি জায়গার উপর ১৩৩ ফুট উঁচু এই মূর্তি অবস্থিত।
আওয়ার লেডি অফ র্যানসম চার্চ
এটি একটি ক্যাথলিক চার্চ। ১৫ শতকে মা মেরীর উদ্দেশ্যে এই চার্চ বানানো হয়েছিল। কন্যাকুমারীতে ঘুরতে গেলে এই জায়গাতে না গেলেই হবে মিস।
সুনামি মনুমেন্ট
২০০৪ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর ভারত মহাসাগর জুড়ে যে ভূমিকম্প এবং সুনামি হয়েছিল তাতে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। সেই সব মৃত মানুষের স্মৃতির জন্য এখানে একটি স্মৃতিসৌধ বানানো হয়েছে। ভারত, সোমালিয়া, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ার মৃত মানুষদের শ্রদ্ধা জানাতে এখানে অনেকেই আসেন।
থিরপারপ্পু জলপ্রপাত
প্রায় ৫০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই জলপ্রপাত কন্যাকুমারীর সবথেকে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি একটি মনুষ্য সৃষ্ট জলপ্রপাত। এখানে জলপ্রপাতের সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি স্নান করতে ও নৌকা বিহার করতে পারবেন। অনেকে এখানে পিকনিক করতে আসেন। এখানে একটি ছোট শিবের মন্দির রয়েছে।
কন্যাকুমারী সমুদ্র সৈকত
কন্যাকুমারীতে আসবেন অথচ সমুদ্র দেখবেন না তাও কি হয়? ভারতের দক্ষিণতম বিন্দু কন্যাকুমারীতে মনোরম সৈকত রয়েছে। সব থেকে সুন্দর এখানকার সমুদ্র সৈকত। ত্রিবেণী সঙ্গমে ভারত মহাসাগর, আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের জল মিশলেও ৩ সমুদ্রের জল কিন্তু এক নয়। তিন সমুদ্রের মধ্যে একটির জল গভীর নীল, অন্যটির জল ফিরোজা নীল এবং অন্যটির জল সবুজ।
থানুমালয়ন মন্দির
থানুমালয়ন কোভিল নামের এই মন্দিরে ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবের পূজা করা হয়। ৯ শতাব্দীতে মন্দিরের শিলালিপিগুলি খোদাই করা হয়েছিল। এই মন্দিরে একটি পাথরে খোদাই করা রয়েছে চারটি সংগীতের স্তম্ভ। বাদ্যযন্ত্রের স্তম্ভগুলো থেকে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সুর নির্গত হয়।
পদ্মনাভপুরম প্রাসাদ
তিরুবনন্তপুরম থেকে ৬৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই প্রাসাদ। এখানে ত্রাভাঙ্কর শাসকদের রাজত্ব ছিল একসময়। এই প্রাসাদের সৌন্দর্য, অন্দরসজ্জা, কালো গ্রানাইটের মেঝে, রঙিন মাইকা দেওয়া জানলা ও রাজ রাজবংশের সদস্যদের ব্যবহৃত জিনিস রয়েছে আজও।
ভগবতী আম্মান মন্দির
কন্যাকুমারীর আরেক প্রসিদ্ধ মন্দির হল ভগবতী আম্মান মন্দির। ৫১ শক্তি পিঠের মধ্যে এটি একটি স্থান। এখানে দেবী সতীকে কন্যাকুমারী আম্মান হিসেবে পূজা করা হয়। মন্দিরের স্থাপত্য এবং সৌন্দর্য ভক্ত এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
মায়াপুর মোম মিউজিয়াম
এই মিউজিয়ামে এপিজে আবদুল কালাম, মহাত্মা গান্ধী, চার্লি চ্যাপলিন, মাদার টেরেজা, মাইকেল জ্যাকসনের মোমের মূর্তি রয়েছে। পর্যটকরা কন্যাকুমারীতে ঘুরতে এলে অবশ্যই এই মিউজিয়ামে একবার ঘুরে যান।
ভাট্টকোট্টাই দুর্গ
সমুদ্রের তীরে অবস্থিত এই দুর্গ গ্রানাইট ব্লক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই দুর্গের কিছু অংশ সমুদ্র পর্যন্ত গিয়েছে। দুর্গটি বর্তমানে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে রয়েছে।
সেন্ট জেভিয়ার চার্চ
১৬০০ শতাব্দীতে এই চার্চ বানানো হয়েছিল। এই চার্চে নাকি অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। এখানে অনেকেই চার্চটিকে দেখতে আসেন।
সানসেট পয়েন্ট
কন্যাকুমারী সানসেট পয়েন্ট থেকে সূর্যাস্তের অসাধারণ সৌন্দর্য দেখা যায়। পূর্ণিমার দিনে একই সঙ্গে সূর্যাস্ত এবং পূর্ণচন্দ্রের উত্থান দেখতে পাবেন। ফটোগ্রাফারদের কাছে এই জায়গা খুবই প্রিয় ছবি তোলার জন্য।
গান্ধী মন্ডপম
মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে তার নামে স্মৃতিসৌধ বানানো হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর অস্থিভস্ম ১২ টি কলসির মধ্যে রাখা হয়েছিল এখানে। তারপর তা ত্রিবেণী সঙ্গমের জলে বিসর্জন দেওয়া হয়।
সাঙ্গুথুরাই সৈকত
কন্যাকুমারীতে অবস্থিত এই সৈকতেও অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন। এখানকার সাদা বালির সৈকত, উপকূল রেখা, সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি জায়গা বেড়ানোর পক্ষে উপযুক্ত।
আরও পড়ুন : বিশ্বের অদ্ভুত ৪ দেশ যেখানে থাকা খাওয়ার জন্য টাকা দেয় সরকার
কীভাবে যাবেন কন্যাকুমারীতে?
ট্রেনে, বিমানে কিংবা বাসে করে কন্যাকুমারীতে যেতে পারেন। হাওড়া স্টেশন থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪২ ঘন্টা। কলকাতা থেকে কন্যাকুমারীর পথে একাধিক ট্রেন চলে। হাওড়া জংশন থেকে কন্যাকুমারী এক্সপ্রেসে চড়ে পৌঁছে যেতে পারেন কন্যাকুমারীতে। আর যদি বিমানে যেতে চান তাহলে কলকাতা থেকে তিরুবনন্তপুরম পর্যন্ত যেতে ৭ ঘন্টা সময় লাগবে।
আরও পড়ুন : কাশ্মীরে বেড়াতে গেলে কোন কোন জায়গা অবশ্যই যাবেন? দেখে নিন তালিকা
কন্যাকুমারীতে কখন যাবেন?
অক্টোবর থেকে মার্চ মাস কন্যাকুমারীতে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত। বর্ষার সময় এখানে না যাওয়াই ভাল। বর্ষা পেরিয়ে যাওয়ার পর অন্যান্য যে কোনও মরসুমে কন্যাকুমারীতে বেড়ানোর প্ল্যান বানাতে পারেন।