টিকিট ছাড়া ট্রেনে ভ্রমণ কার্যত আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি ধরা পড়েন তাহলে জরিমানা হয় তার। তবে জানেন কি ভারতে এমন একটি ট্রেন রয়েছে যেখানে সম্পূর্ণ বিনা খরচে যাতায়াত করতে পারেন যাত্রীরা? বিগত ৭৫ বছর ধরে এই ট্রেন সম্পূর্ণ বিনা টিকিটে যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিচ্ছে। নাম তার ভাখড়া ট্রেন।
ভাখড়া ট্রেন পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত নাঙ্গল এবং ভাখড়ার উপর দিয়ে যায়। এই ট্রেনটি ১৯৪৮ সালে প্রধানত শ্রমিক পরিবহনের জন্য চালু করা হয়েছিল। তখন ভাখড়া ও নাঙ্গল বাঁধে কর্মরত শ্রমিকেরা এই ট্রেনে যাতায়াত করতেন। বাঁধ নির্মাণের জন্য ভারী সরঞ্জাম এই ট্রেনের মাধ্যমেই বহন করা হত।
১৯৬৩ সালে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়। কিন্তু তারপরেও এই ট্রেনের যাতায়াত বন্ধ হয়নি। এখন শ্রমিকেরা নন, ওই এলাকাতে বসবাসকারীরা এই ট্রেনে যাতায়াত করেন। বিগত ৭৫ বছর ধরে এই ট্রেন ২৫টি গ্রামের মধ্য দিয়ে ১৩ কিলোমিটার পথ চলেছে। প্রায় ৩০০ যাত্রী রোজ এই ট্রেনে যাতায়াত করেন। বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া এবং শ্রমিকরা এই ট্রেন ব্যবহার করেন।
আগে এই ট্রেন বাষ্প চালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে চলাচল করতো। ১৯৫৩ সালে আমেরিকা থেকে তিনটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন নতুন ইঞ্জিন আনা হয়। এরপরে আর ট্রেনের ইঞ্জিন বদলানো হয়নি। ট্রেন চলতে ঘণ্টায় ১৮ থেকে ২০ লিটার ডিজেল খরচ হয়। তবে এই ট্রেনের কামরাগুলো কাঠের তৈরি। আজও এর মডেল অটুট রয়েছে।
আরও পড়ুন : এবার গভীর রাতেও মিলবে মেট্রো! বাড়লো ট্রেনের সময়সীমা, দেখুন মেট্রোর নতুন টাইম টেবিল
আরও পড়ুন : ট্রেনের লেডিস কামরায় প্রবেশ করায় গ্রেফতার ৩ লক্ষ পুরুষ, প্রকাশ্যে রেলের চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট
ভাখড়া ট্রেন প্রত্যেকদিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে নাঙ্গল স্টেশন থেকে ছাড়ে। ভাখড়া স্টেশনে পৌঁছায় সকাল সাড়ে আটটার সময়। দুপুর ৩টে ৫ মিনিটে আবার এই ট্রেনটি নাঙ্গল থেকে ছাড়ে। ভাখড়া পৌঁছায় বিকেল সাড়ে চারটের সময়। এই ট্রেন এখন পরিচালনা করে ভাখড়া বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড। ২০১১ সালে একবার এই ট্রেনের পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার কথা উঠেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ভাখড়া এবং নাঙ্গাল বাঁধের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আজও এই ট্রেন বিনা টিকিটে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে।