বীরভূমের রামপুরহাটে অবস্থিত তারাপীঠ মন্দিরের মাহাত্ম্য কার্যত জগতবিখ্যাত। দেশ-বিদেশের বহু মানুষ এখানে দেবী দর্শনে আসেন। রোজ কয়েক হাজার মানুষের ভিড় জমে যায় এখানে। একান্ন সতীপীঠের অন্যতম এই স্থানের একাধিক অলৌকিক মাহাত্ম্য রয়েছে। এই স্থানকে কেন মহাপীঠ বলে জানেন? কেন সিদ্ধপীঠ হিসেবে গণ্য করা হয় এই জায়গাকে?
তারাপীঠ কোথায় অবস্থিত?
বীরভূমের মহকুমা সদর রামপুরহাট শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে তারাপীঠ অবস্থিত। রামপুরহাট এবং চাকপাড়ার তারাপীঠ রোড এখানকার নিকটবর্তী রেলস্টেশন। তারাপীঠের খুব কাছেই সাধক বামাক্ষ্যাপার মন্দির রয়েছে। মারগ্রাম থানার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট্ট গ্রাম আটলাতে সাধক বামাক্ষ্যাপার জন্ম ভিটে আছে।
মহাপীঠ তারাপীঠের মাহাত্ম্য
পুরাণ অনুসারে, পিতা দক্ষের গৃহে স্বামী শিবের নিন্দা সহ্য করতে না পেরে সতী দেহত্যাগ করেন। এতে শিব ভীষণ রেগে গিয়ে সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে ত্রিভুবন জুড়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন। সৃষ্টি ধ্বংস হবে এই আশঙ্কায় বিষ্ণু তখন তার সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ ৫১ টি টুকরো করে ফেলেন। ৫১ সতীপীঠে সতীর দেহের সেই বিভিন্ন অংশ পড়েছে। এগুলি এক একটি শক্তিপীঠ হিসেবে প্রসিদ্ধ যুগ যুগ ধরে।
আরও পড়ুন : তারাপীঠ যাবেন? কোথায় থাকবেন? কী কী দেখবেন? জেনে নিন এক ক্লিকে
তারাপীঠ নাম কেন হয়েছিল?
সতীর দেহের বিভিন্ন অংশ পৃথিবীতে পড়া মাত্র প্রস্তরখন্ডে পরিণত হয়। সতীর ৫১ টি দেহ খন্ডের মধ্যে তার তৃতীয় নয়ন বা নয়নতারা তারাপুর বা তারাপীঠ নামের এই গ্রামে পড়েছিল। ঋষি বশিষ্ঠ প্রথম এখানে সতীর প্রস্তরীভূত নয়নতারা দেখতে পেয়েছিলেন এবং তারা রূপে সতীর পূজা করেন। পরে এই স্থানের নাম হয় তারাপীঠ।
আরও পড়ুন : থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রি! বিনামূল্যে ঘোরার জন্য ভারতের সেরা ১০টি টুরিস্ট স্পট
তারাপীঠকে কেন সিদ্ধপীঠ বলে?
বশিষ্ঠ মুনি তারাপীঠে দেবী সতীর পূজা করেছিলেন। সেই থেকে তারাপীঠকে সিদ্ধ পীঠ বলা হয়। কথিত আছে, সমুদ্র মন্থনের সময় শিব বিষ পান করলে তার গলায় জ্বালা শুরু হয়। ওই সময় তারা দেবী শিবকে স্তন্যপান করিয়ে তার জ্বালা নিবারণ করেন। তারাপীঠে সাধনা করলে সাধক জ্ঞান, আনন্দ, সিদ্ধি এবং অলৌকিক ক্ষমতা পান। তারাপীঠ মন্দির এবং এখানকার শ্মশান পবিত্র তীর্থক্ষেত্র হিসেবে গণ্য হয়। সাধক বামাক্ষ্যাপাও এখানে তন্ত্র সাধনা করতেন।