ডুব দিয়ে স্নান করলেই নাকি ধুয়ে যায় জীবনের সব পাপ। তাই এই ঘাটের নাম হয়েছে পাপক্ষয় ঘাট। পাপ মোচনের জন্য রোজ বহু মানুষের আগমন ঘটে এই জায়গাতে। বলতে গেলে বেশ নামী তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে মহানদী নদীর এই ঘাট। জানেন কি কোথায় রয়েছে এমন জায়গা? কীভাবে এই জায়গা পাপক্ষয় ঘাট হিসেবে স্বীকৃতি পেল? জেনে নিন।
উড়িষ্যার বিনকা শহরের কাছে মহানদী নদীর তীরে রয়েছে পাপক্ষয় ঘাট। প্রায় ৯০০ বছর ধরে এই ঘাটে মানুষ স্নান করে আসছেন পাপ মোচনের আশায়। তারপর ঘাট সংলগ্ন একটি মন্দিরে তারা পুজো দেন। আবার অনেকে এখানে আসেন এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য। মোটকথা উড়িষ্যার এই পাপক্ষয় ঘাট বর্তমানে জনপ্রিয় তীর্থস্থান হওয়ার পাশাপাশি পর্যটন স্থান হিসেবেও খ্যাতি পাচ্ছে।
উড়িষ্যায় পাপক্ষয় ঘাটের ইতিহাস
উড়িষ্যার এই জায়গাতে সোম রাজাদের আমলে সুবর্ণপুর, জগৎনগরী বিনীতপুরের মত জনপদ গড়ে উঠেছিল। বিনীতপুরের বর্তমান নাম হল বিনকা। সোম রাজাদের পর এখানে গঙ্গা সাম্রাজ্যের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হয়। সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন তৃতীয় অনঙ্গ ভীম দেব। তার আমলে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। অনঙ্গ ভীম দেবের সঙ্গে কালাচুরি রাজাদের যুদ্ধ হয়েছিল।
এই যুদ্ধের সময় প্রচুর ব্রাহ্মণের মৃত্যু হয়। রাজা অনঙ্গ ভীম দেবের গায়ে ব্রাহ্মণ হত্যার পাপ লেগেছিল। যে কারণে তার লালা দিয়ে পোকা বের হত। রাজা এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক মন্দিরে পূজো দেন। কিন্তু ফল হয়নি। মহানদী নদী ধরে দক্ষিণে আসতে আসতে পাপক্ষয় ঘাটে তিনি স্নান করেন। এরপর তিনি দেখেন তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। তাই ওই জায়গার নাম হয়ে যায় পাপক্ষয় ঘাট।
এই জায়গাতেই এক মন্দির নির্মাণের ইচ্ছে প্রকাশ করেন রাজা অনন্ত ভীম দেব। এরপর তিনি রাতে স্বপ্ন দেখেন একটি গরু নদী পার হয়ে পাহাড়ের দিকে এগোচ্ছে। তারপর কিছুদূর গিয়ে সে দুধ দিতে শুরু করে। পরের দিন সকালে রাজা দেখেন বাস্তবেই একটি কালো গরু নদী পার হয়ে পাহাড়ের দিকে যাচ্ছে। তাকে অনুসরণ করেন রাজা ও তার পারিষদরা। দেখা যায় একটি নির্দিষ্ট জায়গাতে গিয়ে সত্যিই গরুর বাঁট থেকে আপনাআপনি দুধ বেরিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন : আরও বাড়বে পর্যটকদের ভিড়! কালীঘাট মন্দির নিয়ে বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
আরও পড়ুন : ৩০০ টাকাতেই থাকা-খাওয়া, ঘোরা কমপ্লিট! দেখুন তারাপীঠ ভ্রমণের মাস্টার প্ল্যান
রাজা এরপর ওই জায়গাতেই মন্দির বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। ওইখানে কলিঙ্গ স্থাপত্য অনুসারে মহাদেবের মন্দির গড়ে ওঠে। বর্তমানে উড়িষ্যার চারাদা নামের একটি গ্রামে ওই মন্দিরটি রয়েছে। মন্দিরের নাম হয়েছে কপিলেশ্বর মন্দির। আজও বহু মানুষ এই ঘাটে স্নান করার জন্য আসেন। কপিলেশ্বরের মন্দিরে পুজো দেন।