জম্বু-কাশ্মীর, পাহাড়প্রেমীদের কাছে বরাবরই আকর্ষণীয় জায়গা। ভূস্বর্গ কাশ্মীর আবার তীর্থযাত্রীদেরও খুবই প্রিয়। কারণ এখানে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। বেশ কিছু বিখ্যাত মন্দির রয়েছে এখানে যেখানে সারা বছরই তীর্থযাত্রীদের ভিড় লেগে থাকে। শিব, দুর্গা, কালী, শঙ্করাচার্য ইত্যাদি বিভিন্ন মন্দির রয়েছে জম্বু-কাশ্মীরের আনাচে-কানাচে। যদি তীর্থযাত্রার জন্য জম্মু-কাশ্মীর হয় আপনার পরবর্তী ডেস্টিনেশন তাহলে একবার নজর বুলিয়ে নিন এই তালিকায়।
জম্মু-কাশ্মীরের সেরা ১০ তীর্থস্থান
বৈষ্ণোদেবী মন্দির
জম্বু-কাশ্মীরের পবিত্র স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হল মাতা বৈষ্ণোদেবীর মন্দির। দেশ-বিদেশ থেকে তীর্থ যাত্রীরা এখানে আসেন প্রতিনিয়ত। দক্ষিণ ভারতের তিরুমালা ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরের পর দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক দর্শনীয় মন্দির হল মাতা বৈষ্ণব দেবীর মন্দির। তিন চুড়া বিশিষ্ট ত্রিকুট পর্বতের মধ্যস্থানে একটি গুহাতে অবস্থিত এই মন্দিরে দুর্গা মায়ের আরেক রূপ মাতা রানী বা মাতা বৈষ্ণবীর পূজা হয়। এছাড়া এখানে মহাকালী, মহালক্ষ্মী মহা সরস্বতী পূজা হয়। খুব শীতের সময় এখানে না আসাই ভালো।
অমরনাথ মন্দির
পহেলগাঁও থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে অনন্তনাগ জেলাতে অমরনাথের মন্দিরটি অবস্থিত। প্রায় ৩৯০০ মিটার উঁচুতে একটি বড় গুহার মধ্যে মহাদেবের মন্দির রয়েছে। প্রত্যেক বছরের জুলাই কিংবা আগস্ট মাসের দিকে অমরনাথ যাত্রা হয়। অমরনাথ যাত্রা করলে মহা পূণ্য অর্জন হয় বলে বিশ্বাস করেন তীর্থ যাত্রীরা।
অবন্তীপুর মন্দির
জম্বু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে ঝিলম নদীর ডান তীরে এই মন্দিরটি অবস্থিত। রাজা অবন্তীবর্মন এই মন্দিরের নির্মাতা। এই মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুকে অবন্তীস্বামী হিসেবে ও ভগবান শিবকে অবন্তীশ্বর হিসেবে পুজো করা হয়। বিষ্ণু মন্দিরের দেয়ালে মেঝেতে এবং স্তম্ভগুলোতে প্রাচীন শিল্পকলা এবং ভাস্কর্য খোদাই করা রয়েছে। গোটা বছরের যেকোনও সময় এখানে আসতে পারেন।
শংকরাচার্যের মন্দির
কাশ্মীরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ১১০০ ফুট উপরে অবস্থিত গোপাদারি পাহাড়ে অবস্থিত শংকরাচার্যের মন্দির। এখানে জ্যোতিশ্বর নামে ভগবান শিবের পূজা হয়। গোটা বছরই শংকরাচার্যের মন্দিরের ভ্রমণ করা যায়। তবে গ্রীষ্মের সময়টা এখানে আসার জন্য একেবারে উপযুক্ত।
বাভেওয়ালি মাতা মন্দির
এখানে দেবী মহাকালীর পূজা হয়। কাশ্মীরের তাওয়াই নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দির। এখানে মহাকালীর একটি কালো পাথরের মূর্তি আছে।
হযরতবল মাজার
জম্বু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে অবস্থিত এই মসজিদ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই পবিত্র। শ্রীনগরের ডাল লেকের বাম তীরে অবস্থিত এই মসজিদে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মোহাম্মদের মাথার চুল রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। বছরের যে কোনও সময় এখানে আসা যায়।
মার্তন্ড সূর্য মন্দির
অনন্তনাগ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই সূর্য মন্দির। বর্তমানে এই মন্দিরটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। গ্রীক স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে এই মন্দিরের গায়ে। আলেকজান্ডারের আক্রমণের এই মন্দির কিছুটা ধ্বংস হয়েছিল। পরে অবশ্য মন্দিরের সংস্কার হয়েছে।
আরও পড়ুন : কাশ্মীরে বেড়াতে গেলে কোন কোন জায়গা অবশ্যই যাবেন? দেখে নিন তালিকা
চারার ই শরীফ
শ্রীনগর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মসজিদ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র তীর্থক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে আলেমদার ই কাশ্মীর নামে পরিচিত শেখ নুর উদ্দিন নূরানীর সমাধি রয়েছে। কথিত আছে প্রায় ৬০০ বছর আগে তার মৃত্যুর পর কফিন উড়ে গিয়ে দরগার ঠিক এই জায়গাতে পড়েছিল। বসন্ত এবং গ্রীষ্মের সময় এই স্থানে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।
গুরুদুয়ারা ছেবিন পাটশাহি
ঝিলম নদী এবং ডাল লেকের তীরে অবস্থিত এই গুরুদুয়ারাতে গুরু নানক এবং গুরু হরগোবিন্দের পদধূলি পড়েছিল। এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই স্থান ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।
আরও পড়ুন : কাশ্মীর যাওয়ার আদর্শ সময় কোনটা? কখন গেলে বরফ পাবেন?
গৌরীশংকর মন্দির
জম্বু-কাশ্মীরের প্রাচীনতম হিন্দু মন্দির হল গৌরীশংকর মন্দির। জম্বু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে অবস্থিত রয়েছে এটি। এই মন্দিরে শিব, পার্বতী, শ্রী রাম, মা সীতা, লক্ষণ, হনুমান, মা দুর্গা, গণেশ, ধর্মরাজের মূর্তি রয়েছে। এছাড়াও এখানে হরেক রকম আকারের শিবলিঙ্গ রয়েছে। এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসের সময়টা এখানে আসার জন্য উপযুক্ত।